শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

পাইকারি ক্রেতাশূন্য বাবুরহাট

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ নরসিংদীতে অবস্থিত পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান নিয়ে গড়ে ওঠা প্রাচ্যের ম্যানচেস্টারখ্যাত দেশীয় কাপড় বাজারজাতকরণের হাট। প্রতি বছর রমজানে এ হাটে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বেচাকেনা হয়। তবে এ বারের চিত্র ভিন্ন। বাজারে খুচরা ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও পাইকারি ক্রেতা নেই বললেই চলে।

জানা গেছে, দেশীয় বস্ত্রের প্রায় ৭০ ভাগ কাপড়ের চাহিদা পূরণ করে থাকে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার শেখেরচর-বাবুরহাট। লকডাউন, কম উৎপাদন, পরিবহন সমস্যাসহ নানা জটিলতায় জর্জরিত এ বাজার। কোটি টাকা পুঁজির ব্যবসায় এখন সারা দিন এক টাকাও বিক্রি হয় না এমন দোকানের সংখ্যাও অনেক। টানা দুই বছর লোকসানের মুখে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, টানা ১২ দিন পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর গত ২৫ এপ্রিল শপিংমলগুলো খুলে দেওয়া হয়। খুলে দেওয়ার প্রথম তিন দিন ছিল একেবারেই ক্রেতাশূন্য। তারপর থেকে বেশ কিছু ক্রেতা লক্ষ্য করা গেলেও বেশিরভাগই খুচরা ক্রেতা। তারা সকলেই এসেছেন আশপাশের উপজেলা, পৌর এলাকা বা ইউনিয়ন থেকে। বাজারে পাইকারি ক্রেতার দেখা মিলছে না বললেই চলে।

দুই একজন পাইকার পাশের জেলা বা উপজেলা থেকে এলেও তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাজার পাইকারি ক্রেতাশূন্য বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

আরটেক্স শাড়ি ঘরের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ রুমন বলেন, দুই ঈদকে ঘিরেই এই হাটের বেচাকেনা বেশি হয়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে যাকাতের কাপড়ের (শাড়ি ও লুঙ্গি) একটি বড় অংশ বেচাকেনা হয়। এ জন্য দোকানগুলোতে কাপড়ের আমদানি বেশি হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে বেচাকেনা না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।

গজ কাপড় বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকে শার্ট পিস, প্যান্ট পিসসহ গজ কাপড় বেচাকেনা শুরু হয়। সারাদেশের খুচরা বিক্রেতারা এক মাস আগে থেকেই এসব কাপড় কিনতে আসেন। গত বছর ঈদে কিছুটা বেচাকেনা হলেও এবার লকডাউনে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও খুচরা দোকানপাট বন্ধ থাকাসহ পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বাবুরহাট।

থ্রিপিস বিক্রেতা আব্দুল বাছেদ বলেন, স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ খুচরা কাপড় কিনতে আসছেন, কিন্তু পাইকারি ক্রেতার দেখা নেই। বাবুরহাটে বেচাকেনার এমন দশা অতীতে হয়নি।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আসা এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, এক ঘণ্টার রাস্তায় আসতে তার সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টারও বেশি। ভাড়া দিতে হয়েছে দ্বিগুণ। অন্যান্য বছর ৫ লাখ টাকার কাপড় নিলে ২ দিনে বিক্রি হয়ে যেত। গত দুই বছর এই চিত্র পাল্টে গেছে। মানুষের হাতে বেশি কাপড় কেনার টাকা নেই।

এই বাজারের লেনদেন কম থাকায় সমস্যায় আছেন এর সঙ্গে জড়িত কুলি ও ভ্যানচালকরা। আওয়াল মিয়া নামে এক ভ্যানচালক বলেন, সপ্তাহে তিন দিন এই বাজারে ভ্যান চালিয়ে আয় করতাম ৩ হাজার টাকারও বেশি। এখন পাইকার আসে না, খুচরা ক্রেতারা নিজেরাই পণ্য বহন করে। তাই আয় অনেক কমে গেছে।

ওয়াহাব আলী এক যুগ ধরে কুলির কাজ করেন এই বাবুরহাটে। তিনি বলেন, আগে সারা দিনে ১ হাজারের মতো আয় হতো। কাজ করে শেষ করতে পারতাম না। কাজ আমার পেছনে ছুটত, এখন আমি কাজের পেছনে ছুটি। পাইকার নেই, কেনাবেচা কম। তাই কাজও নেই।

বাজারের সার্বিক সমস্যা নিয়ে কথা হয় নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলী হোসেন শিশিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাবুরহাটের দোকানগুলো খোলা হলেও পাইকারি ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনা সন্তোষজনক নয়। তবে অনলাইনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও পাইকারি ও খুচরা বেচাকেনা হওয়ায় শ্রমিক বিলসহ প্রাথমিক খরচ কিছুটা মেটানো সম্ভব। এ ছাড়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ রয়েছে যা ব্যবসায়ীদের একটু হলেও স্বস্তি দেবে। ইতোমধ্যে আড়াইশো কোটি টাকা মাঝারি ব্যবসায়ীরা পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে সচল থাকতে পারেন সেদিকে বিসিক খেয়াল রাখছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com